যশোরে জিনের রানী সেজে মর্জিনার দেড়যুগ
প্রতারক চক্রের প্রধান সরোয়ার
যশোরের সমাজ নিউজ
জীবজন্তুর হাড়, পুরোনো হাড়ি পাতিল, গাছের কিছু শুকনো শেঁকড় ছাইভম্ম আর মুখবাজিকে পুঁজি করে ভন্ডামোর আশ্রয় নিয়ে দেড়যুগ ধরে সাধারণ মানুষের সাথে প্রতারণা করে আসছেন যশোরের হামিদপুরের বাওড়পাড়ার মর্জিনা বেগম। তার কাছ থেকে দাওয়াই বা তদবির নিয়ে কারো সমস্যার সমাধান হয়েছে এমন উদাহরণ পাওয়া না গেলেও কাড়িকাড়ি টাকা আদায় হচ্ছে সেখানে প্রতিনিয়তই।
জিনের রানী সেজে দালালদের মাধ্যমে মানুষকে ভুল বুঝিয়ে চলছে তার আজব কারবার, বিনা পুজির ব্যবসা। বিজ্ঞানের এই যুগেও শুধু ঝাড়ফুঁক প্রতারণা করে হয়েছেন শূন্য থেকে কোটিপতি, বানিয়েছেন আলীশান বাড়ি। যুবলীগ পরিচয়ে এই প্রতারণামূলক কারবার দেখাশুনা করেন তার বহু বিতর্কিত ছেলে সরোয়ার হোসেন। আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার হাতে কয়েক দফা আটক হওয়া এই সরোয়ার এখন বিএনপি সাজার চেষ্টা করে মায়ের প্রতারণা কর্মকান্ড বহাল তবিয়তে চালিয়ে যাচ্ছেন ম্যানেজ প্রক্রিয়ায়। এ কারণে স্থানীয়ভাবে বহুল আলোচিত হচ্ছে হামিদপুরের বাওড় পাড়ের বাড়িতে মা ছেলের প্রতারণা সিন্ডিকেট, যা দেখার কেউ নেই। প্রশাসনের লোকজনদের কেউ কেউ সেখানে গিয়ে খুশি হয়ে আসেন বলেও অভিযোগ। স্থানীয় চানপাড়া ফাঁড়ি ইনচার্জ প্রতারনার ঘটনা জানলেও অজ্ঞাত কারণে তিনি মুখে কুলুপ এঁটেছেন বলে এলাকায় প্রচার রয়েছে।একাধিক সূত্র থেকে তথ্য মিলেছে, প্রতারক ছেলে সরোয়ার হোসেনের বল ভরসায় নিজেকে জিনের আয়ত্বে থাকা কবিরাজ দাবি করে যেকোনে রোগ সারিয়ে দেয়ার ধুয়ো তুলে প্রতারণা করে যাচ্ছেন মর্জিনা বেগম। জিন হাজির করে দাওয়া দিচ্ছেন জিন তাড়ানো, বাচ্চা হয়না, প্রেম হচ্ছে না, সংসার টিকছে না, হারানো গাড়ি, সন্তান ফেরত পাওয়া, স্বামীকে বশিকরন, হারানো সম্পদ ফিরিয়ে দেয়া, প্রেমিক প্রেমিকাদের মিলনসহ যেকোনো সমস্যার সমাধান। জিন এনে, হাড় ঘুরিয়ে ও ঝাঁড়ফুক দিয়ে চলছে তার নানামুখি সব ভন্ডামো। প্রতিদিন সহজ সরল রোগীদের গলা কাটছেন তিনি। প্রত্যেকের কাছ থেকে ফন্দি ফিকির করে হাতিয়ে নিচ্ছেন মোটা অংকের অর্থ।হামিদপুরের মৃত হারেজ আলীর স্ত্রী জিনের কবিরাজ দাবিদার মর্জিনা বেগম। হামিদপুর মধ্যপাড়া বাওড়ের পাশে তার ডেরা। আট বছর আগে একবারই যশোর সদর ফাঁড়ির টিএসআই রফিকের হাতে ধরাশায়ী হয়ে ৩ লাখ টাকা দিয়ে মুক্তি পেলেও তার ব্যবসা থামেনি। এক সময় কাচা ঘরে বসবাস করা মর্জিনা বেগম এখন আলীশান বাড়ির মালিক। করেছেন অনেক জমাজমিও। সেরেফ বেকার ও ভবঘুরে ছেলে গাড়ির মডেল পাল্টে চলেন। জিনের রানী জাহির করে এক রাতের কথিত স্বপ্নের কাহিনী প্রচার করেন। মর্জিনা বিশেষ আধ্যাত্ম লাভ করেছেন বলে দালালের মাধ্যমে প্রচার করেন মর্জিনা। আর বসে যান বস্তা, মালাঠুলি, কয়লা মাটির হাড়ি, গাছ গাছড়া মাদুলি আর পাথর নিয়েও। প্রচার করেন হারানো সন্তানের খোঁজ দিতে পারবেন, বন্ধ্যা নারীর সন্তান দিতে পারবেন, আয়না দর্পন করে টাকা চোর. ছাগল চোর, গরু চোর সব কিছু দেখিয়ে দিতে পারেন! প্রেম করিয়ে দিতে পারবেন, সংসারে অমিল মিল করে দিবেন! আর কয়েকজন দালাল নিজেরা রোগী সেজে চাউর করেন তারা ভাল হয়েছেন।এই অপপ্রচারে পড়ে যশোরসহ প্রত্যন্ত অঞ্চলসহ জেলার বাইরে থেকেও হামিদপুরে মর্জিনার প্রতারণার ডেরায় আসছেন সহজ সরল মানুষ। আর হাতিয়ে নিচ্ছেন কাড়ি কাড়ি টাকা। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত হামিদপুরের বাওড়ের পাশের বাড়িতে চলছে এই চক্রের ভন্ডামো। প্রতারণা ও ভন্ডামোর আশ্রয় নিয়ে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়া হামিদপুরের আলোচিত কবিরাজ মর্জিনা বেগমকে বহাল তবিয়তে রাখতে তার ছেলে সরোয়ার চেষ্টা করছেন। আগে আওয়ামী লীগ বলয় নিয়ে চললেও এখন বিএনপি বলয়ে ভেড়ার অপচেষ্টা করছেন। একটি মদ্যপ ও বখাটে চক্রকে সাথে নিয়ে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বাওড় এলাকায় মায়ের ঝাড়ফুঁক প্রতারণা ও অর্থ আদায় কার্যক্রম দেখভাল করেন এই সরোয়ার।তথ্য মিলেছে, মর্জিনা তার ছেলে সরোয়ারের মাধ্যমে আজ্ঞাবহ কয়েকজন দালালের মাধ্যমে মিথ্যাচার ছড়িয়ে জীনে ধরা, স্বামীকে বশিকরন, হারানো সম্পদ ফিরিয়ে দেয়ার দাওয়ায় দেয়ার কাজ করছেন তিনি। কোনো কাজ না হলেও মুখবাজি দিয়ে তিনি গ্যারান্টিসহ যেকোনো সমস্যার সমাধান দিয়ে থাকেন। তার সম্পর্কে এলাকাবাসীর কাছে খোঁজ নিলে উঠে আসে কবিরাজের নানাচিত্র। অনেকেই জানান রীতিমত ধর্ম নিয়ে শেরেকি ও ধান্ধাবাজির ব্যবসা করছেন মর্জিনা। অপপ্রচারে পড়ে যশোর শহর ছাড়াও প্রত্যন্ত অঞ্চলসহ জেলার বাইরে থেকেও এখানে আসছে সহজ সরল মানুষ। সকালে দালালের মাধ্যমে রোগী আসে তার ডেরায়। ওই এলাকার কয়েক দালাল এই ভন্ডের মুরিদ সেজে মধ্যস্থতা করছেন। দালাল আগে থেকে রোগীর নাম ঠিকানা ও রোগের নাম নিয়ে আসে। আর রোগী আসলে দালারদের দেয়া তথ্যে এই ভন্ড বলে ওঠেন “তোর নাম কোহিনুর বেগম, তোর পেটে ব্যথা, বাচ্চা হয় না, স্বামী সংসারে অশান্তি” এমন নানা কথা। এমন ভন্ডামিতে তাকে সব জান্তা ভেবে টাকা বের করে দেয় সহজ সরল মানুষ। অনেকে এই ভন্ডের কান্ড দেখে হতবাক হচ্ছেন। কেউ কেউ বলছেন পুলিশ ম্যানেজ করে চলছেন তিনি। আধুনিক যুগেও লোকজনকে বোকা বানিয়ে ঝাড়ফুঁক প্রতারণা করে চলা মজিনাকে আটক দাবি করেছেন তারা।এ ব্যাপারে স্থানীয় চানপাড়া ফাঁড়ি ইনচাজ ওয়াহিদুজ্জামানের সাথে কথা বললে তিনি জানিয়েছেন, কবিরাজির নামে প্রতারণা ও অর্থ হাতানোর বিষয়টি তিনিও শুনেছেন। তিনি জানান জিন বা হাড় গোড়ের কারবার বা ফকরেমি কবিরাজির বিষয় নিয়ে ওই এলাকায় মুখোরোচক কাহিনী প্রচার রয়েছে। কেউ মর্জিনার বিরুদ্ধে অভিযোগ দিলে আইনগত ব্যবস্থা নেবো। তবে চানপাড়া ফাঁড়ি পুলিশের সদস্য সেজে কোনো এক পুলিশ সদস্য ওই ভন্ড কবিরাজের ডেরা থেকে ৮ হাজার টাকা হাতিয়েছেন বলে তার কাছে তথ্য এসেছে। কে সেই পুলিশ সদস্য খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে। সরোয়ার হোসেন সরোর ব্যাপারেও খোঁজ নেয়া হবে।